ভানু বিসর্জন ক্ষণ
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০২:৩০:৩৭ রাত
আজ একটু আগে ফ্যাক্টরী থেকে বের হলাম।
৬টা ৩০ বেজে গেল তাতেও।
বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে হারুন সাহেবকে নিয়ে কোনাবাড়ীর দিকে রওয়ানা হলাম। আমাদের সেই বিদ্যা উৎসাহী সভায় অনেকদিন যাওয়া হয় না। হারুন সাহেবই উদ্যোগী হয়ে আমাকে নিয়ে গেলেন। না হলে সেখানে আমার যাওয়ার কথা নয়। মেকুরের নিয়মের কিছুটা বাহিরে হয়ে গেলেও গেলাম।
সবাই খুব খুশী হল। চা পর্ব শেষ হলে কবিতা আবৃত্তি'র আসর হল। হারুন সাহেবের মত কাঠখোট্টা মানুষ ও একটা আবৃত্তি করলেন। আমি মেকুর। কবিতা আমাকে কখনও টানে নাই। আজও শুনলাম- কিছুটা বাধ্য হয়েই।
এরপর দেশের চলমান রাজনীতি।
প্রথমেই চলমান সংকট নিয়ে কিছুক্ষণ দু'দলকে বাঁশ গিফট করা। এরপর পোশাক শিল্পের উদ্ভুত সংকট নিয়ে।
শ্রম আইনের একটা ধারা আছে,'নো ওয়ার্ক-নো পে'। গার্মেন্টস মালিকেরা এখন এই আইনের আওতায় এনে চলমান পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ ঘোষণা করতে পারেন।
এখন যদি এই মুহুর্তে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে তো আগামী বন্ধের দিনগুলোর জন্য আমি ও অন্যরা স্যালারি পাবোনা। তো সেই জন্য বিকল্প কিছু আগে থেকেই চিন্তা করে রাখা ভাল। হারুন সাহেবকে বললাম,
: চৌরাস্তায় পপকর্ণের প্যাকেট পাইকারি মূল্যে কিনতে পাওয়া যায়। পরিচিত থাকলে বিক্রী করেও টাকা দেওয়া যায়। বললেন,
:ওগুলো কিনে বিক্রী করব? কোথায়?
: কেন, বাসে বাসে। সবাই নগদ টাকায় কিনে নিবে।দিনে সব মিলিয়ে ২০০-২৫০ টাকা থাকবে। মন্দ কি।
আরিফ সাহেব বলেন,
:আমি একটা লিস্ট করেছি। আমরা চন্দ্রা থেকে সেই রামপুরা বা কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত রুট ঠিক করে নেই।একজন পপকর্ণ এর প্যাকেট নেই। হারুন ভাই আপনি এটা নেন। মাহমুদ ভাই সিদ্ধ ডিম নিয়েন। বিট লবণের সাথে পাবলিক ভালই খাবে। আমি টুথব্রাশ বিক্রী করব।সাথে পানের দাগ দূর করার ক্যামিক্যাল।-
মাহফুজ সাহেব এলেন এবারে আলোচনায়,
: পেপার বিক্রী করা যেতে পারে। কিংবা বাচ্চাদের বই এবং সাথে নামাজ শিক্ষার বই। এগুলো বাসের ভিতর অনেক বিক্রী হয়।
হাসিঠাট্টার ভিতর দিয়ে কথাগুলো এলেও একটা নির্মম সত্য আমাদের সবার মনের ভিতর উকি দিচ্ছিল। সত্যই যদি বন্ধ হয়ে যায়, আমাদের কি হবে? সবাই এখানে মাস আনে মাস খায় টাইপের। বেতনের উপরই সকলের পরিবার নির্ভরশীল। একটা নির্দিস্ট মাসিক রুটীন প্রোগ্রামে্র চক্রে সবাই জড়িয়ে আছি। একটু টেনশন লাগবেই। যতই মনকে বোঝাই, আরে কিছু হবে না।
তারপর ও কিছু একটা থেকেই যায়।
ওদিকে হারুন সাহেব বলে চলেছেন,
: বাসের কন্ডাক্টরগিরি করলে কেমন হয়? তবে যাত্রীদের অনেক গালাগালি ...
আমি অবাক হয়ে এই মানুষগুলোকে দেখছি। কত সহজে সবাই আসন্ন সাময়িক অস্বস্তিটুকু কে মন থেকে দূর করে দিচ্ছে।এই মধ্যবিত্ত ও মিড-লেভেল ম্যানেজমেন্টের আমার কলিগেরা সবাই সহজ মানুষ। কিন্তু জীবন এদেরকে জটিল বানিয়ে দেয়।
সময়ে সময়ে...
সবই তাহলে সময়ের প্রয়োজনেই হয়!
এই এখন যেমন সময় কঠিন... আমরাও কঠিন হতে যাচ্ছি?
বিষয়: বিবিধ
৯০১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো থাকুন।
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
বারাকাল্লাহু ফীহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন